চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে টানা এক ঘণ্টাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা-বাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানির সংকটে পড়েছেন নগরবাসী। তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত।

প্রচণ্ড গরমে যেন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ে ব্যবসায়ীদের ঈদের বিকিকিনি যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমিন কৃষি উৎপাদনের সেচব্যবস্থাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, চট্টগ্রামে গড়ে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি সামাল দিতেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট থেকে ৪৪০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে এক হাজার ১৮০ থেকে ১৯০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। চাহিদার বিপরীতে এসময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ মেগাওয়াট। তবে পিক ও অফপিক সময়ে বিদ্যুতের এই ঘাটতি পরিবর্তন হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে যেভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করছে বিতরণ বিভাগ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গড়ে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এই বিদ্যুৎ চট্টগ্রামে রাখার সুযোগ নেই। নিয়মানুয়ায়ী, দেশের যেখানেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক সেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে। জাতীয় গ্রিডের কন্ট্রোল থেকে তা ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে না নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতারা। তাদের দাবি, চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণ না করে চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যেন জাতীয় গ্রিডে না নেওয়া হয়।

ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা, আবার কোথাও ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। অথচ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১ হজার ৬৮৫ মেগাওয়াট। আর চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অবস্থিত এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৩৮৫ থেকে ৪শ মেগাওয়াট, শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০৬ মেগাওয়াট, মহেশখালী মাতারবাড়ীর ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৬৩০ থেকে সাড়ে ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে ৩০ মেগাওয়াট, কক্সবাজারের খুরুস্কুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও চট্টগ্রামে বৈষম্যমূলকভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। এই অঞ্চলে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের বাসিন্দা শাহ কামরুল আলম বলেন, দুদিন ধরে তারা ওয়াসার পানি সংগ্রহ করতে পারছেন না। লোডশেডিংয়ের কারণে পানি পাচ্ছেন না। এ কারণে রান্নাবান্না, শৌচকর্ম কোনোকিছুই সুষ্ঠুভাবে করতে না পেরে মারাত্মক দুর্ভোগে আছেন। রোজার মাসে এমন দুর্ভোগ কাম্য নয়।